" কেশবতী "
" কেশবতী "
---------------------
টুপ করে আরেকফোঁটা জল ঝড়ে পড়ল। আবারো ঠিক বইটার ওপরেই। পানির ফোঁটাটা পড়তেই বইয়ের পাতাটা যেন এক নিমিষেই শুষে নিল জলটুকু। একটা দাগ ফুটে রইল সাদা পাতাটায়। বর্ণ আবার চোখ তুলে তাকায় সামনের সিটের দিকে। সামনের সিটের ওপর দিয়ে একরাশ কালো চুল এসে পড়েছে পেছনে। সিট আর চুলের জন্য চুলের মালকিনকে ঠিক দেখা যাচ্ছে না। শুধু একপাশ থেকে ফর্সা কপালের একটা পাশ একটু দেখা যাচ্ছে। আর সে কপালের কোণায় একটা ছোট্ট তিল ফর্সা কপালে অদ্ভুত সুন্দর হয়ে ফুটে আছে। ঠিক যেমনটা ছোট্টবেলায় মায়েরা বাচ্চার কপালের কোণায় কাজলের টিপ দেয় তেমনি। বাসটা ছুটে চলেছে। বর্ণ একা একা বসে বোর ফিল করছিল। তাই ব্যাগ থেকে একটা নভেল বের করে পড়তে শুরু করেছিল। আর শুরু করতে না করতেই সামনের চুল থেকে একটার পর একটা পানির ফোঁটা পুরো বইটাকেই যেন ভাসিয়ে নেয়ার পণ করেছে। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না বর্ণ সংকোচে। কেমন মেয়েরে বাবা! চুল ধুয়েছে ভাল কথা, একটু ভাল করে মুছে বেরোলে কি হত! মুছে যখন বেরোয়নি তখন একটু বেঁধে রাখলে কি হত! বেঁধে যখন রাখেনি যাতে পিছনের ব্যক্তির সমস্যা না হয় চুলগুলোকে একটু সামলে রাখলেই বা কি হত! ভাবনার মাঝখানেই আরো একটা ফোঁটা সেই চুল বেয়ে নেমে এসে বইটাকে আরেকটু ভালভাবেই ভিজিয়ে দিল।
: এই যে ম্যাম শুনছেন। এই যে… আপনাকেই…
: আমাকে!
: জ্বি…
: নাম, ঠিকানা ফোন নম্বর ছাড়া অন্য কিছু চাইলে বলতে পারেন।
: মানে?
: শোনেন নি?
: জ্বি।
: কি চাই?
: চুল…
: কি! চুল? চুল দিয়ে কি করবেন?
: বই পড়ব।
: চুল নিয়ে বই লেখা হয় শুনেছি, চুল দিয়ে বই পড়া হয় তা তো শুনিনি…
: জ্বি না ম্যাডাম আপনার চুলগুলো সামনে থেকে সরান।ওই ব্ল্যাক ডিসপ্লের কারণে আমার বইয়ের সাদা ডিসপ্লে স্বাধীনভাবে শ্বাস নিতে পারছে না।
: ওহ সরি।
: সরির কিছু নেই। নিজের জিনিস সামলান।
: জিনিস মানে! এটা কি ধরণের ওয়ার্ড!
; না মানে…
: আর বোঝাতে হবে না। সবাইকে জিনিস মনে করা আপনাদের স্বভাব হয়ে গেছে। সে স্বভাব…
: একসকিউজ মি। আপনার ভাষণ শোনার ইচ্ছে নেই। চুল সরিয়ে নেয়ার জন্য ধন্যবাদ। এবার মাফ করেন।
প্রচন্ড রাগে বৃষ্টির ফর্সা মুখটা আরো লাল হয়ে গেছে। ছেলেটার কথাগুলি গায়ে লেগেছে ওর। ইচ্ছে করছে হাতের মোবাইলটা ওর মুখে ছুঁড়ে মারে। দাঁতে দাঁত চেপে ও জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। এতক্ষণ বন্ধ ছিল জানালাটা। একটা হালকা টান দিয়ে অনেকখানি খুলে দেয় বৃষ্টি। বাইরের বাতাসটা গালে এসে লাগতেই একটা ভাললাগা এসে ভর করে শরীরে। রাগটা একটু কমে আসছে। আড়চোখে একবার ছেলেটার দিকে তাকায় ঘাড় ফিরিয়ে। ছেলেটা দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বই পড়ছে।
বর্ণের নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। ভাষাটা আসলে মোটেই সংযত হয়নি। উচিত হয়নি এটা, যদিও ও ইচ্ছে করে বলেনি। তবু সরি বলা উচিত। বাট সরি বলতে গেলে যদি আবার কিছু বলে টলে বসে? সিন ক্রিয়েট করে? থাক বাবা দরকার নেই। বাস থেকে নামতেই আর কেই বা কাকে চিনবে? এটুকু সময় নাহয় চুপচাপ কাটিয়ে দেয়া যাক। সে বইতে নজর দেয়। একবার চোখ তুলে আবার দেখে। একপাশ থেকে কপাল আর কপালের কালো তিলটা দেখা যাচ্ছে।
হঠাৎ বাতাসের ঝাপটা এসে গায়ে লাগতেই চোখ তুলে সেদিকে তাকায় বর্ণ। মেয়েটা জানালা খুলেছে। হঠাৎ একগোছা চুল বাতাসের তোড়ে একবার উড়ে এসে ছুঁয়ে যায় বর্ণের সারামুখ কয়েক সেকেন্ডের জন্য। চুলে কেমন যেন একটা মায়া মায়া গন্ধ। বর্ণ আরেকবার চোখ বুজে সে ছোঁয়ার জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু ঘটনাটার আর পুনরাবৃত্তি ঘটেনা। বর্নের অপেক্ষা বাড়তে থাকে।
ইচ্ছে করছে, একবার ডেকে বলে, ‘এক্সকিউস মি! আপনার চুলগুলো একচুয়েলি জিনিস না। এগুলো আসলে একেকটা স্বপ্ন। চুলগুলোকে কি আরেকবার পিছনে এলিয়ে দেয়া যায়? আমি স্বপ্ন ছুঁতে চাই আরেকটিবার… প্লিজ
---------------------
টুপ করে আরেকফোঁটা জল ঝড়ে পড়ল। আবারো ঠিক বইটার ওপরেই। পানির ফোঁটাটা পড়তেই বইয়ের পাতাটা যেন এক নিমিষেই শুষে নিল জলটুকু। একটা দাগ ফুটে রইল সাদা পাতাটায়। বর্ণ আবার চোখ তুলে তাকায় সামনের সিটের দিকে। সামনের সিটের ওপর দিয়ে একরাশ কালো চুল এসে পড়েছে পেছনে। সিট আর চুলের জন্য চুলের মালকিনকে ঠিক দেখা যাচ্ছে না। শুধু একপাশ থেকে ফর্সা কপালের একটা পাশ একটু দেখা যাচ্ছে। আর সে কপালের কোণায় একটা ছোট্ট তিল ফর্সা কপালে অদ্ভুত সুন্দর হয়ে ফুটে আছে। ঠিক যেমনটা ছোট্টবেলায় মায়েরা বাচ্চার কপালের কোণায় কাজলের টিপ দেয় তেমনি। বাসটা ছুটে চলেছে। বর্ণ একা একা বসে বোর ফিল করছিল। তাই ব্যাগ থেকে একটা নভেল বের করে পড়তে শুরু করেছিল। আর শুরু করতে না করতেই সামনের চুল থেকে একটার পর একটা পানির ফোঁটা পুরো বইটাকেই যেন ভাসিয়ে নেয়ার পণ করেছে। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না বর্ণ সংকোচে। কেমন মেয়েরে বাবা! চুল ধুয়েছে ভাল কথা, একটু ভাল করে মুছে বেরোলে কি হত! মুছে যখন বেরোয়নি তখন একটু বেঁধে রাখলে কি হত! বেঁধে যখন রাখেনি যাতে পিছনের ব্যক্তির সমস্যা না হয় চুলগুলোকে একটু সামলে রাখলেই বা কি হত! ভাবনার মাঝখানেই আরো একটা ফোঁটা সেই চুল বেয়ে নেমে এসে বইটাকে আরেকটু ভালভাবেই ভিজিয়ে দিল।
: এই যে ম্যাম শুনছেন। এই যে… আপনাকেই…
: আমাকে!
: জ্বি…
: নাম, ঠিকানা ফোন নম্বর ছাড়া অন্য কিছু চাইলে বলতে পারেন।
: মানে?
: শোনেন নি?
: জ্বি।
: কি চাই?
: চুল…
: কি! চুল? চুল দিয়ে কি করবেন?
: বই পড়ব।
: চুল নিয়ে বই লেখা হয় শুনেছি, চুল দিয়ে বই পড়া হয় তা তো শুনিনি…
: জ্বি না ম্যাডাম আপনার চুলগুলো সামনে থেকে সরান।ওই ব্ল্যাক ডিসপ্লের কারণে আমার বইয়ের সাদা ডিসপ্লে স্বাধীনভাবে শ্বাস নিতে পারছে না।
: ওহ সরি।
: সরির কিছু নেই। নিজের জিনিস সামলান।
: জিনিস মানে! এটা কি ধরণের ওয়ার্ড!
; না মানে…
: আর বোঝাতে হবে না। সবাইকে জিনিস মনে করা আপনাদের স্বভাব হয়ে গেছে। সে স্বভাব…
: একসকিউজ মি। আপনার ভাষণ শোনার ইচ্ছে নেই। চুল সরিয়ে নেয়ার জন্য ধন্যবাদ। এবার মাফ করেন।
প্রচন্ড রাগে বৃষ্টির ফর্সা মুখটা আরো লাল হয়ে গেছে। ছেলেটার কথাগুলি গায়ে লেগেছে ওর। ইচ্ছে করছে হাতের মোবাইলটা ওর মুখে ছুঁড়ে মারে। দাঁতে দাঁত চেপে ও জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। এতক্ষণ বন্ধ ছিল জানালাটা। একটা হালকা টান দিয়ে অনেকখানি খুলে দেয় বৃষ্টি। বাইরের বাতাসটা গালে এসে লাগতেই একটা ভাললাগা এসে ভর করে শরীরে। রাগটা একটু কমে আসছে। আড়চোখে একবার ছেলেটার দিকে তাকায় ঘাড় ফিরিয়ে। ছেলেটা দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বই পড়ছে।
বর্ণের নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। ভাষাটা আসলে মোটেই সংযত হয়নি। উচিত হয়নি এটা, যদিও ও ইচ্ছে করে বলেনি। তবু সরি বলা উচিত। বাট সরি বলতে গেলে যদি আবার কিছু বলে টলে বসে? সিন ক্রিয়েট করে? থাক বাবা দরকার নেই। বাস থেকে নামতেই আর কেই বা কাকে চিনবে? এটুকু সময় নাহয় চুপচাপ কাটিয়ে দেয়া যাক। সে বইতে নজর দেয়। একবার চোখ তুলে আবার দেখে। একপাশ থেকে কপাল আর কপালের কালো তিলটা দেখা যাচ্ছে।
হঠাৎ বাতাসের ঝাপটা এসে গায়ে লাগতেই চোখ তুলে সেদিকে তাকায় বর্ণ। মেয়েটা জানালা খুলেছে। হঠাৎ একগোছা চুল বাতাসের তোড়ে একবার উড়ে এসে ছুঁয়ে যায় বর্ণের সারামুখ কয়েক সেকেন্ডের জন্য। চুলে কেমন যেন একটা মায়া মায়া গন্ধ। বর্ণ আরেকবার চোখ বুজে সে ছোঁয়ার জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু ঘটনাটার আর পুনরাবৃত্তি ঘটেনা। বর্নের অপেক্ষা বাড়তে থাকে।
ইচ্ছে করছে, একবার ডেকে বলে, ‘এক্সকিউস মি! আপনার চুলগুলো একচুয়েলি জিনিস না। এগুলো আসলে একেকটা স্বপ্ন। চুলগুলোকে কি আরেকবার পিছনে এলিয়ে দেয়া যায়? আমি স্বপ্ন ছুঁতে চাই আরেকটিবার… প্লিজ
কোন মন্তব্য নেই