"ভাইয়া মাথার ঐ ব্যান্ট টা দেখি তো"
"ভাইয়া মাথার ঐ ব্যান্ট টা দেখি তো"
মেয়েলি কন্ঠে পাশে ফিরে তাকালাম।একটি মেয়ে
মাথার ব্যান্ট কিনতে এসেছে।আপুর সাথে কসমেটিকস
দোকানে এসেছি।আপুটা যে কি! বুঝিনা।প্রায় পঁচিশ
মিনিট ধরে একাকি দাঁড়িয়ে থাকতে আর ভালো
লাগছিলো না।তাই সঙ্গী হিসেবে পকেট থেকে ফোনটা
বের করে ফেসবুকে ঢুঁ দিলাম।তখনি একটি মেয়ের কন্ঠে
পাশে ফিরে তাকাতেই হলো।যদিও দোকানটিতে আরো
মেয়ে আছে।তবে এই মেয়ের কন্ঠে কেনো জানি হঠাৎ
করেই হৃদয়টা ষ্পন্দিত হলো।বুকের বাম পাজরে কম্পন এসে ধাওয়া করল।কন্ঠটা এতো মিষ্টি বলে বুঝানো যাবে না।কে
যানে! মেয়েটি জন্মের পর মেয়েটির মা কতখানি মধু
খাইয়েছে।ভাবতে ভাবতেই দেখি মেয়েটি কয়েকটা
ব্যান্ট দেখছে।কিন্তু একটাও তার পছন্দ হচ্ছে না এমনি
বুঝা যাচ্ছে।চেহারায় কেমন যেনো একটা অস্থিরতা
ভাব।যদিও চেহারার পুরুটা দেখতে পারছি না।তাই হাত
বাড়িয়ে একটি ব্যান্ট নিয়ে মেয়েটিকে বললাম,
"এটা নিন।আপনার চুলের খোপায় খুব মানাবে"
মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে এক কথায় উত্তর দিলো,
"নাহ।এটা আমার পছন্দ না"
আশ্চর্যের ব্যাপার আমি মেয়েটির চোখের দিকে
তাকিয়ে আর চোখ ফেরাতে পারছি না।দুটি চোখে
টানা কালো কাঁজল দেয়া।মায়া মাখানো দুটি চোখ।
মেয়েটির মায়াবি চোখে তাকালেই মনে হয় পৃথিবীর সব
সুখ যেনো তার চোখে এসে থেমে গেছে।চিকন দুটি
গোলাপি ঠোঁট।ঠোটের এক কোনে ছোট্ট একটি তিল।ঐ
তিলটাই মেয়েটির মায়াবী ভাবটা আরো লক্ষগুন
বাড়িয়ে দিয়েছে।চোখের এক পলকেই মেয়েটিকে
আবিষ্কার করে ফেললাম।ঠোঁটের কোনে তিল,আর চোখ
মিলিয়ে মায়াবিনী সে।চুল গুলো খুব ঘন ও সিল্কি।
বাহির থেকে আসা প্রকৃতির মৃদু বাতাসে মেয়েটির চুল
গুলো উড়ছে।কেমন যেনো মাতাল একটা গন্ধ আসছে চুল
থেকে।চুলের গন্ধটা আমাকে মাতাল করে তুলছে।আমার
দুটি চোখ বুজে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাসে মাতাল গন্ধটা
পরিপূর্ন করলাম।মেয়েটির হাতের আলতো ছোঁয়ায়
বাস্তব জগতে ফিরে এলাম।ব্যান্ট টি কি আমার হাতেই
ছিলো! কিন্তু একি! মেয়েটি ঐ ব্যান্ট টি ই
নিচ্ছে,যেটি আমি পছন্দ করে দিয়েছি....মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে বলল,
"ধন্যবাদ ভাইয়া"
কেনো ধন্যবাদ দিলো কিছুই বুঝলাম না।তাকিয়ে আছি
মেয়েটির ঠোঁটের কোনের অষ্পষ্ট হাসি আর মায়াবি
টানা কালো দুটি চোখের দিকে।মেয়েটির দুটি মায়াবি
চোখ আমাকে তার প্রতি আকৃষ্ট করেছে।সব দিক দিয়ে
মায়াবিনী সে।চোখের প্রতিটি পলকে যাদু আছে তার।
মেয়েটির কথায় আছে সেই যাদুর মন্ত্র।কিছু মূহুর্তের জন্য
বাকরুদ্ধ হয়ে যাই আমি।ইচ্ছে হচ্ছিল তাকে জিজ্ঞেস
করি কি নাম তার।তার নামের মাঝেও আবার তেমন
কোন যাদু মন্ত্র কিংবা মায়া নেই তো!দোকান থেকে
বেড়িয়ে চলে যাচ্ছে মেয়েটি।ইচ্ছে করছে আমার রাখা
সেই প্রিয় নামটি ধরে ডাকতে।বলতে ইচ্ছে করছে
তোমার নামটি বলে যাও "মায়াবিনী........."
.
আপুর চোখের আড়াল হয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলাম এক ঝলকেই।ঐ মায়াবিনীর পিছু নিয়েছি।হাঁটতে হাঁটতে রিক্সা ষ্টান্ড পর্যন্ত এলাম।মেয়েটা রিক্সায় চড়ে বসল।মেয়েটাকে ডাকতে ইচ্ছে করছে প্রবল।শহুরে পথঘাট ব্যস্ততায় মোটামোটি ভালো জ্যাম লেগেছে।ওভারব্রীজের কাজ চলছে তাই কিছুক্ষনের জন্য নাকি রাস্তা বন্ধ থাকবে।বসন্তের রোদ্দুর দুপুরে তেজ ঢালা সূর্যের কিরন ত্রিভূবনে চুইয়ে পরছে।পকেট থেকে টিস্যু বের করে মুখের উপরের বিন্দু বিন্দু ঘামের কনার উপর টিস্যু চেপে ধরতেই হুরহুর করে সমস্ত ঘাম চুসে নিল।মেয়েটা রিক্সা থেকে নেমে গেছে।দ্বিতীয় বারের মত মেয়েটার মায়াবি মুখটা আবারো দেখলাম।অস্বস্থ্যির ছায়া পরেছে তার মুখের উপর।তবুও যেন সে সব দিক থেকেই মায়াবিনী।কয়েক পলক মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে হন হন করে সামনের দিকে পা ফেলে হাঁটা ধরল।সূর্যের প্রখরতায় ঘেমে যাচ্ছে সে।পিছু পিছুু খানিকটা ভয় নিয়ে হাঁটছিলাম আমি।ফুল হাতা জামা পরেছে সে।হাতার শেষাংশের কাপড় দিয়ে মুখের ঘাম মুছার বৃথা চেষ্টা করছে সে।মনে হল তার সাথে কথা বলার একটা সুযোগ পেলাম।তার পাশাপাশি গিয়ে একটা টিস্যু বাড়িয়ে দিলাম তার দিকে।সাথে ছোট্ট একটা হাসিও দিয়েছিলাম তখন।সে আমার দিকে তাকিয়ে সাধরে টিস্যুটা গ্রহন করল।ভয়ের রেশ কেটে কিছুটা সাহসের ছায়া পরল মনে প্রান্তরে।সে টিস্যু দিয়ে মুখটা মুছে প্রশ্ন করল,
"কোথায় থাকেন আপনি"
তার এই প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না তখন।ভেবেছিলাম হয়ত একটা হাসি দিয়ে ধন্যবাদ দিবে!
"জ্বি____পুলিশ লাইন"
কথাটা বলতে গিয়ে একটুথেমে গিয়েছিলাম।তখন সে এক ফালি হেসে দিল।ঠোঁট বাকানো হাসি।মুচকি হাসি বলা যায়।তার সব কিছুতেই মুগ্ধ হচ্ছি বারবার।তার প্রেমে পড়ে গেছি হয়ত।ভালোবেসে ফেলেছি তাকে।যাকে বলে প্রথম দেখায় ভালোবাসা।যদিও প্রথম দেখায় ভালোবাসা হয় শুনেছি,কিন্তু তা কখনো বিশ্বাস করি নি।কিন্তু আজ তা বিশ্বাসের অযোগ্য নয়।মানুষ যা কাকতলীয় জিনিসগুলো বিশ্বাস করতে চায় না,তা হয়ত তাদের সাথে ঘটে।
"তা রাজগঞ্জের দিকে কোথায় যাচ্ছেন?"
আবারো সে প্রশ্ন করল।হাটতে হাটতে তো কান্দিরপার পেরিয়ে রাজগঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি তা খেয়াল ই করি নি।
"না মানে,ঐদিকে একটা কাজ আছে।"
মিথ্যার আশ্রয় নিলাম।
"তা কাজটা কি জানতে পারি?"
"অবশ্যই।কেন নয়।"
"বলুন কাজটা কি?"
"মানে গ্রামীনফোন কাষ্টমার কেয়ারে যাব।"
"এটা তো ঝাউতলা!!" ভালো ভাবে মিথ্যা বলতেও শিখেন নি!"
ইস! মিথ্যা বলতে গিয়ে মাথা ঘুলিয়ে গিয়েছিল! চুপ করে রইলাম কিছুক্ষন।নিরবতার আপৃষ্ঠে সে বলল,
"আমি বাসার কাছাকাছি এসে গেছি"
"কিছু বলার ছিল আপনাকে"
"সেটা আগেই বুঝতে পেরেছি।মিথ্যা বলে এতক্ষন সময় নষ্ট না করলেও হতো"
"আপনার নামটা জানতে পারি?"
উচ্ছাস ভরা মুখে হেসে দিল সে।তার হাসির কারনটা বুঝলাম না।বোকার মত কিছু বলি নি তো!!
"আপনি নাম জানার জন্য এতখানি পথ পিছু পিছু হেঁটে এসেছেন!!"
চুপ করে রইলাম।
"আমি অর্পা।পুরো নাম সাইফা তানজুম অর্পা।আর কিছু?"
"উহু"
"কিসের উহু! শুধু নাম জানতে এসেছেন নাকি নাম্বারটাও নিতে এসেছেন!"
মেয়েটার কথায় মাথার মধ্যে ভাজ পরল।সে কিভাবে বুঝল নাম্বার চাইতে এসেছি!!! কিছু বলার আগে বুঝে যাওয়ার ক্ষমতাও হয়ত সৃষ্টিকর্তা তাদের মধ্যে বৃদ্ধমান রেখেছে।
"দেখি মোবাইলটা দিন?"
বাধ্য ছেলের মত তার কথা অনুসারে মোবাইলটা তার হাতে দিলাম।কিছু টাইপ করে মোবাইলটা আবার আমার হাতে হস্তান্তর করল।
"নাম্বার দিয়েছি।ডায়াল লিষ্টেই আছে।সেভ করিনি।সেভ করে নিয়েন।"
ঘাড়টা নাড়িয়ে মাথাটা কিঞ্চিত কাত করে ছোট্ট করে বললাম,
"আচ্ছা"
"আর অত বোকা-সোকা হলে চলবে না কিন্তু! যাই তাহলে,বাসার কাছে এসে গেছি"
"আচ্ছা ফোনে কথা হচ্ছে তাহলে?"
"হুম,যাই"
বলেই হন হন করে হেঁটে চলে গেল সে।
.
এক বছর পর,
বাইক ড্রাইভ করে রূপসাগর পার্কের দিকে যাচ্ছি।অর্পা সেখানে দেখা করতে বলেছে।সেই মায়াবিনীর মনের সন্নিকটে ভালোবাসার নৌকো ঠেঁকেছে তার চিবুক বরাবর।ভালোবাসাময় দিনগুলি স্বপ্নিল কাটছে।এই এক বছরের মধ্যে অবশ্য কয়েকবার ই দেখা হয়েছে।তবে ভালোবাসা নামক সম্পর্কের পর এই ই প্রথম পার্কে যাচ্ছি।
ব্যাঞ্চিটার উপর বসে আছে সেই মায়াবিনী অর্পা।ব্যাঞ্চিটার উপর পিষ্ঠে পিঠ লাগিয়ে অর্পার উরুর উপর মাথা রেখে শুয়ে আছি বেশ কিছুক্ষন ধরেই! চুল গুলো নিয়ে খেলা করছে সে।আর তার চুলগুলো নিয়ে খেলা করছে শূন্য বাতাসের প্রখট।তাকিয়ে আছি অর্পার সমস্ত চেহারা জুড়ে।আরো দেখতে ইচ্ছে করে মায়াবিনীকে।দেখার স্বাদ যেন ফুরায় না।বিকেলের লালচে সূর্য কিরন এসে পরছে অর্পার নাকের ঢগায়।দূর গগনের রোদ্দুরও মায়াবিনীকে ছোঁয়ে যেতে চায়.....................
`
কোন মন্তব্য নেই